পঙ্গু
১.
চিপা দূর্গন্ধ গলিটা থেকে বেরিয়ে গাছটার দিকে তাকালো শামসু। গাছটায় লম্বা লম্বা ফল হয়। ছোট ছেলেপেলেরা ফল কুড়াতে প্রায়ই গাছটা নিচে ভীড় করে। ছোট বাচ্চাদের শামসু পছন্দ করে না। দেখলেই তাই তাড়া করে। এমনিই তাড়া করে।
আজ সকালে কোন বাচ্চাকেই আশেপাশে দেখলো না। বাচ্চাগুলো সাধারণত বিকালেই আসে এদিকে। গাছের নিচে একটু ফাকা জায়গা। এক্কা দোক্কা খেলে, কুতকুত খেলে। আরো কত কি খেলে।
ঐ সময় শামসু বাসায় থাকে না। অফিসে থাকে। ঢাকা শহরের এক গার্মেন্টসের হেল্পার সে। শুক্রবারে সেই অফিস বন্ধ থাকে। বাচ্চাগুলো তাই শুক্রবারে আর এদিকে আসে না। আজ অবশ্য শুক্রবার না।
গাছ সমেত ফাকা জায়গাটা পার হয়ে আরেকটা গলিতে ঢুকলো শামসু, পথ সংক্ষেপ করার জন্য। এই গলিটাও অনেক দুর্গন্ধময়। এমনেই চিপা গলি, তার উপরে অর্ধেক রাস্তা দখল করে ঘুমাচ্ছে একটা কুকুর। মেজাজ বিগড়ে গেলো শামসুর। কুকুরটার কাছে যেয়ে কষে লাগিয়ে দিলো এক লাথি। ঘেউঘেউ করতে করতে কুকুরটাও পালিয়ে গেলো এলাকা থেকে। এই এলাকার কুকুর গুলোও শামসুকে এক রকম ভয় পায়।
"নবাবজাদার বাপের রাস্তা নাকি এটা?", মনে মনে ভাবলো শামসু। তারপর আবার কি ভেবে নিজেই মনে মনে হাসলো। প্রতিদিন সকালে এরকম কিছু করতে করতেই অফিসে যায় শামসু। আজও যাচ্ছে। যদিও তার মন পড়ে আছে নিজের বস্তি ভিটায়। কারণ সেখানেই আছে তার গর্ভবতী স্ত্রী।
বড় রাস্তায় পৌঁছে সে অটো ধরে প্রতিদিন। আজ কিছুটা সময় আছে, তাই হেটেই অফিসের দিকে রওনা হয় সে। কুয়াশাভেজা সকালে একটা দাঁড় কাক কি যেন অভিশাপ করতে করতে উড়ে চলে যায় দুরের গাছটার দিকে। শামসু মনে মনে ভাবে, এতো ভালো লক্ষণ নয়। সংস্কার-কুসংস্কারের ভারি চাদর এই কুয়াশা আর বাতাসের মতোই ঘিরে রেখেছে শামসুর জীবন। পা দ্রুত চলে তার।
২.
অফিসে কোনো ঝামেলা হয়নি আজ। মেজাজটাও আজ তাই ফুরফুরে শামসুর। অফিস থেকে ঠিক ছয়টায় বের হয় সে। সোজা বাসায় যাবে আজ। কেনো জানি মন ছটফট করেছে আজ সারাদিন। বড় রাস্তাটা পার হবার জন্য ফুটওভার ব্রিজে উঠলো সে। ব্রিজের ঠিক মাঝখানে এক পঙ্গু বাচ্চা ভিক্ষা করে প্রতিদিন। কেউ পাশ দিয়ে হেটে গেলেই তার পা জড়িয়ে ধরে বাচ্চাটা। জড়িয়ে ধরলে শামসু পা ঝাকি দিয়ে সরিয়ে নেয়। কখনো আস্তে আবার কখনো চিৎকার করে বলে, "কুত্তার বাচ্চা পাও ছাড়"। এইসব বাচ্চাগুলো নাকি জন্মগত ভাবে পঙ্গু থাকে না। ভিক্ষা করানোর জন্যেই তাদের হাত পা কেটে ফেলা হয়। কারো চোখ উপড়ে ফেলা হয় গরম চামচ দিয়ে। কিন্তু তাতে শামসুর কিছু আসে যায় না। যদিও এই বাচ্চাটার সাথে শামসু নিজের চেহারার অনেক মিল খুঁজে পায় কেনো জানি।
আজ শামসুর পকেটে একটা দুই টাকার নোট আছে। ভেবেছিলো টাকাটা ভিক্ষা দিবে। কিন্তু বাচ্চাটা আজ আসেনি ভিক্ষা করতে। দ্রুত বাসার দিকে পা চলে শামসুর।
বাড়িতে শামসুর জন্যে অপেক্ষা করছিলো শামসুর নিয়তি। দুর্গন্ধ গলিটা দিয়ে বস্তির ভিতরে ঢুকে সে। কিন্তু কেমন যেনো ছিমছাম পরিবেশ। এরকম তো হয়না কখনো, মনে মনে ভাবে সে। তার নিজের ঘরের দিকে ছোট খাটো জটলার দিকে তাকিয়ে একটু ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত কাছে যেয়ে জিজ্ঞাস করে সে। জানতে পারে তার গর্ভবতী স্ত্রী ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছে এবং মা ও ছেলে দুজনই বেচে আছে। কিন্তু তাহলেও সবাই এত গম্ভীর কেনো, মনে মনে ভাবে শামসু। দুই রুমের বাসা তার ভেতরের রুমে আছে তার অসুস্থ স্ত্রী আর সন্তান। ভেতরের দিকেই এগিয়ে যায় সে। নিজের সন্তানকে দেখতে চায় সে। কিন্তু না সে আসলে নিজের নিয়তি কে দেখে সে আতকে উঠে। নিজ চোখকেই বিশ্বাস করতে পারে না শামসু। তার নিজের সন্তানেরও দুটি পা পঙ্গু। দুটি পা ছাড়াই জন্ম নিয়েছে তার সন্তান।
৩.
নদীর ধারে ফুটবল খেলছিলো কয়েকটি কিশোর। তাদের দলনেতা শামসু হঠাৎ খেলা থামিয়ে দিলো। মনে এখন তার অন্য চিন্তা। দূরে একটা কুকুরের বাচ্চা খেলছিলো জীবনে শেষ বারের মতো। হঠাৎ কুকুরের বাচ্চাটার সামনের দুই পা ভেংগে দেয় শামসু আর তার বন্ধুরা।
বিকেলে নদীর ধারে কাতরাতে দেখা যায় একটা পঙ্গু কুকুরের বাচ্চাকে। নদীর ধারে হাটতে আসা অনেকেই দেখে বাচ্চাটাকে। কুকুর তো, তাই বেশিরভাগই আর সেদিকে দ্বিতীয়বার তাকায়নি। কয়েকজন মুখের কাছে একটু আধটু খাবার ছুড়ে মারে।
সদ্য হাটতে শেখা এক মানুষের বাচ্চা মাটি থেকে এক টুকরো প্লাস্টিক কুড়িয়ে কুকুরের বাচ্চার দিকে ছুড়ে মারে।
আসলে কখনো কখনো মানুষের ভাষাগুলো হারিয়ে যায়.... অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারে না.... গল্পটা নিয়ে আসলে কিছুই বলার নেই.... কারন আপনার গল্পগুলো সত্যিই অসাধারনভাবে আমার মনে গেথেঁ যায় ৷ গল্পটা থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি.... One of the most impactful stories I have ever read. I wish some feelings could be shown about how much significance this story has really....
ReplyDeletei agree ..
DeleteJemon kormo temon fol😌
ReplyDeletenothing to say...........😌😌😌😔😔❤❤❤❤❤
ReplyDelete