যোদ্ধা - সাকিব জিযান
১.
“ভাইজান একটু সরেন, ঝাড়ু দিমু।”
“খাড়া বাদামডা বেইচ্চা লই।” শীতের রাত তিনটার সময় কোন এক অচেনা রেইল স্টেশনে চলছিলো কথপোকথনগুলো। ঝাড়ুদার কিশোরের সাথে তরুন বাদাম বিক্রেতার কথাবার্তা। একটু অবাক হয়েই থেমে থাকা রেইলের দরজায় দাঁড়িয়ে কান পেতে রাখে যোদ্ধা।
“হপ্তায় একদিন ঝাড়ু দেস না, আর আইজকা মাঝ রাইতে ঝাড়ু দিবার আইছস? চান্দ আইজ কোন দিক দিয়া উঠলো?”
ছেলেটা মুখের দুই পাটি দাঁত বের করে হাসলো। অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি। হাসি থামিয়ে ঝাড়ু দিতে দিতেই বলল, “আমি কি সাধে আইছি? কাইল বড়সাব আইব”
“ক্যারা আইব? কোন দিক থিকা আইবো?”
“তা জাইনা আমার লাভ আছে? আমার কাম ঝাড়ু দেয়া আমি ঝাড়ু দিতাছি।”
আরো কয়েকজন লোক জড় হলো। কেউ বাদাম কিনতে কেউবা শুধুমাত্র হাওয়া খেতে। আর কনকনে ঠান্ডায় যোদ্ধা কেনো বসে আছে নিজেও জানে না।
“কার থাইক্কা কাম নেস তুই? এত রাইতে কেডা তোরে দিলো এই কাম?”
“রুবেল ভাইক চিনো? হেয় কাম দেয়, একেক দিন একেক কাম দেয়”
“ত বেতন কত দেয়?”
“আমাক বেশি দেয় না। খালি খাওন দেয় দুইবেলা আর প্রতিদিন আশি ট্যাকা দেয়।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যোদ্ধা দেখছিলো ঝাড়ু দেয়া। প্লাটফর্মের ময়লাগুলো ঝাড়ু দিয়ে নিচে রেইল লাইনে ফেলছে ছেলেটা। খালি প্লাটফর্ম পরিস্কার হলেই চলবে তার, নিচে রেইল লাইনের কি হলো তা তার দেখার বিষয় না। ট্রেনটা ছাড়তে দেড়ি করছে কেনো জানি।
২.
যোদ্ধা তার হার না মানা জীবনে এক নতুন গল্প লেখার সুযোগ পেলো সেদিন। ঝাড়ুদার সেই কিশোরটিকে ডাক দিয়ে সে জিজ্ঞাস করে, ”লেখা পড়া করবি?”
ছেলেটা যেন আকাশ থেকে পড়ে। বলে উঠে, “করবার তো চাই, কিন্তু ক্যামনে করমু? কাম না করলে খামু কি?”
অনিশ্চয়তার এক নিষ্ঠুর স্বপ্ন দেখে ছেলেটি। অদ্ভুত সে স্বপ্নে যোদ্ধা তাকে নিজের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে বলে, “পড়া লেখা করতে চাইলে এই ঠিকানায় চলে আসবি। রাতের এই ট্রেনে করে রাজশাহী এসে নামবি। তোর ব্যবস্থা আমি করবো।”
পুর্ণিমার চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠে স্বপ্ন দেখা সেই কিশোরের মুখ। সে ঝাড়ু দিতে থাকে আর চিন্তা করতে থাকে এক নতুন যোদ্ধার চেহারা।
৩.
কিন্তু না। যোদ্ধা সে রাতে সুযোগটা নেয় নি। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্লাটফর্ম পরিস্কার করা দেখেছে। সেই কিশোরকে ডাক দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি সেই রাতে। আজ প্রায় ষোল-সতেরো বছর পর যোদ্ধা সেই একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও সে রাতের কথা তার মনে নেই। মনে রেখেছে শুধু সৃষ্টিকর্তা। আজ সে কোন ট্রেনের যাত্রী নয় বরং গন্তব্যহীন এক পলাতক আসামী সে। এক হেরে যাওয়া যোদ্ধা সে। আজকেও বড় সাহেব আসবে, ধরা পড়বে সেই যোদ্ধা। বড় সাহেবের জন্য একটু দুরেই প্লাটফর্ম পরিস্কার করছে এক যুবক।
“ভাইজান একটু সরেন, ঝাড়ু দিমু।”
“খাড়া বাদামডা বেইচ্চা লই।” শীতের রাত তিনটার সময় কোন এক অচেনা রেইল স্টেশনে চলছিলো কথপোকথনগুলো। ঝাড়ুদার কিশোরের সাথে তরুন বাদাম বিক্রেতার কথাবার্তা। একটু অবাক হয়েই থেমে থাকা রেইলের দরজায় দাঁড়িয়ে কান পেতে রাখে যোদ্ধা।
“হপ্তায় একদিন ঝাড়ু দেস না, আর আইজকা মাঝ রাইতে ঝাড়ু দিবার আইছস? চান্দ আইজ কোন দিক দিয়া উঠলো?”
ছেলেটা মুখের দুই পাটি দাঁত বের করে হাসলো। অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি। হাসি থামিয়ে ঝাড়ু দিতে দিতেই বলল, “আমি কি সাধে আইছি? কাইল বড়সাব আইব”
“ক্যারা আইব? কোন দিক থিকা আইবো?”
“তা জাইনা আমার লাভ আছে? আমার কাম ঝাড়ু দেয়া আমি ঝাড়ু দিতাছি।”
আরো কয়েকজন লোক জড় হলো। কেউ বাদাম কিনতে কেউবা শুধুমাত্র হাওয়া খেতে। আর কনকনে ঠান্ডায় যোদ্ধা কেনো বসে আছে নিজেও জানে না।
“কার থাইক্কা কাম নেস তুই? এত রাইতে কেডা তোরে দিলো এই কাম?”
“রুবেল ভাইক চিনো? হেয় কাম দেয়, একেক দিন একেক কাম দেয়”
“ত বেতন কত দেয়?”
“আমাক বেশি দেয় না। খালি খাওন দেয় দুইবেলা আর প্রতিদিন আশি ট্যাকা দেয়।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যোদ্ধা দেখছিলো ঝাড়ু দেয়া। প্লাটফর্মের ময়লাগুলো ঝাড়ু দিয়ে নিচে রেইল লাইনে ফেলছে ছেলেটা। খালি প্লাটফর্ম পরিস্কার হলেই চলবে তার, নিচে রেইল লাইনের কি হলো তা তার দেখার বিষয় না। ট্রেনটা ছাড়তে দেড়ি করছে কেনো জানি।
২.
যোদ্ধা তার হার না মানা জীবনে এক নতুন গল্প লেখার সুযোগ পেলো সেদিন। ঝাড়ুদার সেই কিশোরটিকে ডাক দিয়ে সে জিজ্ঞাস করে, ”লেখা পড়া করবি?”
ছেলেটা যেন আকাশ থেকে পড়ে। বলে উঠে, “করবার তো চাই, কিন্তু ক্যামনে করমু? কাম না করলে খামু কি?”
অনিশ্চয়তার এক নিষ্ঠুর স্বপ্ন দেখে ছেলেটি। অদ্ভুত সে স্বপ্নে যোদ্ধা তাকে নিজের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা দিয়ে বলে, “পড়া লেখা করতে চাইলে এই ঠিকানায় চলে আসবি। রাতের এই ট্রেনে করে রাজশাহী এসে নামবি। তোর ব্যবস্থা আমি করবো।”
পুর্ণিমার চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠে স্বপ্ন দেখা সেই কিশোরের মুখ। সে ঝাড়ু দিতে থাকে আর চিন্তা করতে থাকে এক নতুন যোদ্ধার চেহারা।
৩.
কিন্তু না। যোদ্ধা সে রাতে সুযোগটা নেয় নি। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্লাটফর্ম পরিস্কার করা দেখেছে। সেই কিশোরকে ডাক দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি সেই রাতে। আজ প্রায় ষোল-সতেরো বছর পর যোদ্ধা সেই একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও সে রাতের কথা তার মনে নেই। মনে রেখেছে শুধু সৃষ্টিকর্তা। আজ সে কোন ট্রেনের যাত্রী নয় বরং গন্তব্যহীন এক পলাতক আসামী সে। এক হেরে যাওয়া যোদ্ধা সে। আজকেও বড় সাহেব আসবে, ধরা পড়বে সেই যোদ্ধা। বড় সাহেবের জন্য একটু দুরেই প্লাটফর্ম পরিস্কার করছে এক যুবক।
josss onk
ReplyDelete