Posts

Showing posts from 2019

শ্রাবনের ধারা - সাকিব জিযান

Image
বৃষ্টি পড়ছে। চার বছরের ছোট বাচ্চাটা পাঁচতলার উপরে বারান্দা হতে হাত বের করে রেখেছে। ইশ্‌ আরেকটু জোরে বৃষ্টি পড়লে তার পুরো হাতটাই ভিজে যেত। বৃষ্টি পড়ছে। ফুটওভার ব্রিজের উপর বসা বাচ্চাটা ভিজে একাকার। কোন দিকে গেলে খোকন কাকা মারবে। কারণ সে তো ভিক্ষা করতে বসেছে, খেলতে না। ইশ্‌ আরেকটু আস্তে যদি বৃষ্টি পড়ত!  বৃষ্টি পড়ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটা নতুন ছাতা কিনেছে। যদি আরও কয়েক ঘন্টা এভাবে বৃষ্টি পড়ত, তবে সে ছাতা নিয়ে স্কুলে যেতে পারত। ইশ্‌ আরেকটু পরে যদি বৃষ্টি আসতো! বৃষ্টি পড়ছে। সামান্য দিন মুজুরের ছেলে আজ স্কুলে যাবে কিভাবে ভাবছে। তার তো আর রেইন কোর্ট নেই। ইশ্‌ বৃষ্টিটা যদি কাল রাতে আসতো! সারা রাত গরমে ঘুম হয় নি। বৃষ্টি পড়ছে। (অসমাপ্ত) 

যোদ্ধা - সাকিব জিযান

১. “ভাইজান একটু সরেন, ঝাড়ু দিমু।” “খাড়া বাদামডা বেইচ্চা লই।” শীতের রাত তিনটার সময় কোন এক অচেনা রেইল স্টেশনে চলছিলো কথপোকথনগুলো। ঝাড়ুদার কিশোরের সাথে তরুন বাদাম বিক্রেতার কথাবার্তা। একটু অবাক হয়েই থেমে থাকা রেইলের দরজায় দাঁড়িয়ে কান পেতে রাখে যোদ্ধা। “হপ্তায় একদিন ঝাড়ু দেস না, আর আইজকা মাঝ রাইতে ঝাড়ু দিবার আইছস? চান্দ আইজ কোন দিক দিয়া উঠলো?” ছেলেটা মুখের দুই পাটি দাঁত বের করে হাসলো। অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি। হাসি থামিয়ে ঝাড়ু দিতে দিতেই বলল, “আমি কি সাধে আইছি? কাইল বড়সাব আইব” “ক্যারা আইব? কোন দিক থিকা আইবো?” “তা জাইনা আমার লাভ আছে? আমার কাম ঝাড়ু দেয়া আমি ঝাড়ু দিতাছি।” আরো কয়েকজন লোক জড় হলো। কেউ বাদাম কিনতে কেউবা শুধুমাত্র হাওয়া খেতে। আর কনকনে ঠান্ডায় যোদ্ধা কেনো বসে আছে নিজেও জানে না। “কার থাইক্কা কাম নেস তুই? এত রাইতে কেডা তোরে দিলো এই কাম?” “রুবেল ভাইক চিনো? হেয় কাম দেয়, একেক দিন একেক কাম দেয়” “ত বেতন কত দেয়?” “আমাক বেশি দেয় না। খালি খাওন দেয় দুইবেলা আর প্রতিদিন আশি ট্যাকা দেয়।” দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যোদ্ধা দেখছিলো ঝাড়ু দেয়া। প্লাটফর্মের ময়লাগুলো ঝাড়ু দিয়ে নিচে রেইল লাইন...

পঁচিশ টাকায় ফুলের গল্প – সাকিব জিযান

Image
বাসা থেকে বেরিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছি। উদ্দেশ্য জিয়া হল। কারণ ওইখানে মাত্র পঁচিশ টাকায় দুপুরের খাবার পাওয়া যায়। পকেটের টাকা বাঁচানোর তীব্র ইচ্ছার কারণেই এই ভর দুপুরে এক কিলো রাস্তা হেঁটে এক বেলার খাবার খেয়ে আসতে হচ্ছে। শুক্রবারের দুপুরে রাস্তায় মানুষজন নাই বললেই চলে। এমনেই মগজ ঝলসানো রোদ। তার উপরে যদি পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটতে থাকি, তাহলে মরীচিকার উপরে দাঁড়ানো মানুষটাকেও নিজের আপনজন মনে হয়। প্রথমে বড় রাস্তা তারপর ছোট রাস্তা তারপর আবার বড় রাস্তা। রাস্তার আর শেষ হয় না। এইরকম সময় কোন সঙ্গী ছাড়া হাঁটতে আসলেই কস্ট লাগে। হলে পৌঁছালাম একেবারে শেষের দিকেই। ভাগ্য ভালো খাবার শেষ হয়নি তখনও। দানবের মত গলা পর্যন্ত একগাদা খাবার খেয়ে জিয়া হলের বাইরে এলাম। চমৎকার ঝাউ গাছ গুলোর কৃত্রিম সৌন্দর্য ভালোই লাগে। কিন্তু সেই সৌন্দর্য এখন আবার বাসায় ফেরত যাওয়ার শক্তি আর সাহস যোগাতে সাহায্য করছে না। তাই ভাবলাম একটু জিরিয়ে নেই জিয়া হলের কাছের পুকুর পাড়টায়। এই ভর দুপুরে কাউকে পুকুর পাড়ে দেখা যাওয়ার কথা না। কিন্তু না একজন মানুষ আছে। আর আছে বড় গাছগুলোর নিচে কয়েকটা বেঞ্চ আর একটা দোলনা। আস্তে এগিয়ে যেয়ে দোলনায় বসল...

একটি প্রেশার কুকার রম্য – সাকিব জিযান

Image
একটা অদ্ভুত গ্রামের মানুষদের গল্প এটা। সেই গ্রামের মানুষ সবকিছুতেই প্রতিযোগিতা করে, ভালো মন্দ কিংবা ভান্দ(ভালো আর মন্দের মিশ্রণ) সবকিছুতেই। তো গ্রামের মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব নিয়েও প্রতিযোগিতা করবে, সেটা স্বাভাবিক কিন্তু অদ্ভুত। আর আমাদের গল্প যে আসবাবটা নিয়ে তা হলো একটা অদ্ভুত পাতিল।  গল্পের শুরুটা হয় মফিজ মিয়ার বাড়িতে যেদিন মফিজ মিয়া শহর থেকে একটা প্রেশার কুকার কিনে আনলেন। অনেক দামি এই পাতিলে সবকিছু রান্না হয় অনেক তাড়াতাড়ি। তার স্ত্রীতো বেজায় খুশি, আর সবার পাতিলের চেয়ে তার পাতিল সেরা! এর চেয়ে বড় কথা পাতিলটা শীষ দেয়। মফিজ মিয়াও বেজায় খুশি। একদিন মফিজ মিয়ার স্ত্রী রান্নার জন্য মাংস বসিয়ে কোন এক কাজে গিয়ে ভুলে যায় রান্নার কথা। যখন মনে পরে, রান্না ঘরে দৌড়ে আসে সে। তত ক্ষনে মাংস হাড় সবকিছু গলে কি এক অবস্থা! কিন্তু মফিজ দম্পতি তাতে খারাপ টা না দেখে ফলাও করে তাদের পাতিলের গুন গাইতে থাকে, পাতিলটা হাড়কেও গলিয়ে নরম করতে পারে! এইপর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু মফিজ মিয়ে একদিন বলেই ফেললেন, তাদের পাতিল পাথর পর্যন্ত সিদ্ধ করতে পারে। এবার গ্রামের টনক...

স্বপ্ন - সাকিব জিযান

Image
যান্ত্রিকতা আর কোলাহলের ভীড়ে মত্ত একটা ট্রেন ছুটে চলছে যান্ত্রিকতার দিকেই। প্রচুর ভীড়, যেন আর একজন মানুষ বেশি উঠলেও তা ইস্পাত ট্রেনের শরিরে ফাটল ধরিয়ে দিবে। একটি ছোট ছেলে আমড়া বিক্রি করছিল সেই ট্রেনের  অমানবিক ভীড় ঠেলে। স্বপ্ন দেখার এই বয়সে সে যে স্বপ্ন দেখেনা তা না। কিন্তু তাতে আঘাত হানে তার অতীত। একসময় সে স্কুলে যেত, বাবা বিহীন সে সংসারে তা ছিল ট্রেনের এই ভীর ঠেলার মতোই কঠিন। তবুও সে হাল ছাড়ে নি। কারণ তখন তার মা তাকে স্বপ্ন দেখাতো। কিন্তু তার স্বপ্ন ভাংগে। মিথ্যা চুরির অপবাদে যেদিন আক্কাস আলী তাকে বেদম প্রহার করে, তারপর আর সে স্কুলে যায় নি। আজ আমড়া বিক্রির সময়ও সে স্বপ্ন দেখে, একদিন এই ট্রেনটা তার নিজের হবে। তখন আর অন্য কোন আমড়াওয়ালা তাকে ধাক্কা দিতে পারবে না। অনেক দিন পর সে একটু বড় হয়। স্থানীয় বাজে ছেলেরা তাকে এখন নেতার নজরে দেখে। আরও অনেক বছর পরের কথা। এখন আর সে বালক নেই। হয়েছে অনেক বড়। এখন আর সে ট্রেনের মালিক হবার মতো ছোট স্বপ্ন দেখে না। কারন এখন সে একটা পুরো স্টেশনের মালিক। তার ভয়ে উঠে বসে সমগ্র স্টেশনের হকার-শ্রমিক সবাই। আক্কাস আলী জানেও না তার ছাত্র আজ ক...

কুকুরগুলো - সাকিব জিযান

Image
নদীর ধারে রাস্তার পাশে বড় গাছটা কাটা হচ্ছে। আগে ডাল পালা কাটা হবে। তারপর পুরো গাছটাকে কেটে গাছটির অহংকারি শির ভূপাতিত করবে মানুষ। একজন মানুষ আছে গাছটির উপরের বড় ডালে। আর দু'জন আছে গাছটির নিচে। বড় ডাল গুলো কাটা হলেই তাদের কাজ শুরু করবে তারা। আরেকটা প্রাণী ছিলো তাদের একটু অদূরেই। একটা কুকুর। কুকুরটার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই লোকগুলোর এই কাজে। তবে সমস্যাটা বাধল একটু পর। একটা বড় ডাল নিচে পরলো কুকুরটার পাশে। ঘেউঘেউ করে উঠলো কুকুরটাও। হয়তো এই ঘেউঘেউ করার পিছনে ছিলো একটা চাপা কান্না। কিন্তু তা মানুষগুলোর বোধগম্য না। একজন লোক ভয় পেয়ে উঠে কুকুরটার আচরণে। কামড়ে দিবে না তো আবার! হাতের কুড়ালটা ছুড়ে মারে কুকুরটার দিকে। কুকুরটারও ভাগ্য ভালো, একটা পায়ে সামান্য জখম হয়েছে শুধু। দৌড়ে পালিয়ে যায় গাছতলা থেকে। রাস্তার পাশে বড় বাড়িটার প্রাংগনে রাত কাটায় কুকুরটা। ওই বাড়িতে একটা ছেলে আছে, যে মাঝে সাঝে কুকুরটাকে তার ফেলনা খাবারটুকু দিত। আজ সন্ধ্যায় সেই বাড়ির সামনেই বসে আছে কুকুরটা। সেই ছেলেটা আজও এলো অনেক রাতে। কুকুরটার জখম সে দেখতে পেয়েছে। কিন্তু তাতে কি, এইরকম কতো জখম হয় রাস্তার কুকুর গুলোর। এমনেই সেরে...

ঘুম - সাকিব জিযান

Image
চোখটা খুলে দেখি সকাল ৬ টা ৪৭ মিনিট। তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ি বিছানা থেকে। গতকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে উঠার পরও দেড়িতে কলেজে পৌছাই। আজ তাই তাড়াহুড়া করে কোন রকম শার্ট-প্যান্ট পরেই রওনা হই কলেজের উদ্দ্যেশ্যে। দ্বিতীয় বারের মতো ঘুম ভাঙলো বাসে বসে। প্রচুর ঘুম পাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো আসাদগেটে পৌছে ঘুমটা ভাঙলো। তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমেই একরকম উড়ে উড়েই কলেজে পৌছালাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ক্লাস শুরু হবার ১০ মিনিট আগেই অদ্ভুতভাবে কলেজে পৌছে গেছি। ঘুমটা এখোনো প্রচন্ডরকম ক্লান্ত করে রেখেছে আমায়। কফি খাওয়া দরকার। হাতে সময় থাকায় কফি নিয়ে বসে পড়ি ক্যান্টিনের পাশের বেঞ্চ গুলোতে। ঝিমুচ্ছি আর কফি খাচ্ছি। তৃতীয়বারের মতো ঘুম ভাঙলো ক্যান্টিনে। উঠে দেখি কফিটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি ঘড়িতে তাকাই। ৯টা বেজে ৩০ মিনিট। আমার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো। দুটো ক্লাস মিস!! এমনিতেই আমাদের কলেজের নিয়ম-নীতি অনেক কড়া। এখন ক্লাসে গেলে তো চরম অপমানিত হবো। ক্যান্টিন হতে বাইরে এসে দেখি একজন শিক্ষক ঘুরাঘুরি করছেন। তাই দৌড়ে ঢুকে পড়লাম বাথরুমে। হঠাৎ বাথরুমের দরজায় টোকা। ঠক! ঠক! ঠক! ভ...

পদ্মা নদীর মাঝি -মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
পদ্মার এক মাঝি ও তার সমাজ কে নিয়ে গড়ে উঠে এই উপন্যাসের মূল কাহিনী। উপন্যাসের মূল নায়ক কুবের হলেও খলনায়ক কে তা স্পষ্ট নয়। সম্ভবত হোসেন মিয়াকেই খলনায়ক বানিয়েছেন লেখক।  এক অতি দরিদ্র সাধারণ মাঝি থেকে হোসেন মিয়া কিভাবে অনেক পয়সাওয়ালা হলেন তা এক অনন্য সাধারণ উপায়ে বর্ণনা করেছেন লেখক। একি সাথে পদ্মাপাড়ের মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন হোসেন মিয়া এমনকি যেটা সম্ভব হয়নি জমিদার মেজকর্তার দ্বারাও। অন্যদিকে বসবাস অনুপযোগী ময়নাদ্বীপে আবাস তৈরির মতো অসম্ভব কাজও একমাত্র হোসেন মিয়ার দ্বারাই সম্ভব। কুবের কে নিয়ে কাহিনী এগিয়ে চললেও কুবের ছিল এই সবের নিরব দর্শক ও ভুক্তভোগী। আর দশটা সাধারণ মনুষের মতই তার জীবন।  ময়নাদ্বীপ হতে পালিয়ে আসা রাসুর কাহিনী পাঠককে ময়নাদ্বীপ সম্পর্কে আকৃষ্ট করবে আর একি সাথে পদ্মাপাড়ের মানুষের সুখ দুখের গল্পও অনেকটা নাড়া দিবে পাঠককে। আরো জানুন  এখানে । বইটি পড়তে চাইলে  Download ।

চোর - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
"চোরের অভিজ্ঞতা অতুলনীয়, হৃদয়ের বিবর্তন তাঁহাদের অসাধারণ।" অসাধারণ এই বাক্যটি দিয়েই পূরো গল্পটির সারসংক্ষেপ করা সম্ভব। একজন চোর ও যে ভালোবাসতে পারে, কবি হয়ে উঠতে পারে তা এই গল্প পড়লে অনুভব করা যায়। গল্পের মধু চুরি করে, কিন্তু শুধু হাত ফাকা হয়ে যাবার পর। তবুও ভালোবাসার মানুষের মুখের হাসি ফুটানোর জন্য অসুস্থ শরীরে নিয়েও সে চুরি করতে যায়। কিন্তু ফিরে এসে সে বুঝতে পারে যে তার নিজের ঘরেই চুরি হয়ে গেছে। তার ভালোবাসার মানুষ চুরি হয়েছে। তাই গল্পের শেষ লাইন টাও হয়েছে অনবদ্য "জগতে চোর নয় কে? সবাই চুরি করে।" গল্প টি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন  download