কুকুরগুলো - সাকিব জিযান

নদীর ধারে রাস্তার পাশে বড় গাছটা কাটা হচ্ছে। আগে ডাল পালা কাটা হবে। তারপর পুরো গাছটাকে কেটে গাছটির অহংকারি শির ভূপাতিত করবে মানুষ। একজন মানুষ আছে গাছটির উপরের বড় ডালে। আর দু'জন আছে গাছটির নিচে। বড় ডাল গুলো কাটা হলেই তাদের কাজ শুরু করবে তারা।

আরেকটা প্রাণী ছিলো তাদের একটু অদূরেই। একটা কুকুর। কুকুরটার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই লোকগুলোর এই কাজে। তবে সমস্যাটা বাধল একটু পর। একটা বড় ডাল নিচে পরলো কুকুরটার পাশে।

ঘেউঘেউ করে উঠলো কুকুরটাও। হয়তো এই ঘেউঘেউ করার পিছনে ছিলো একটা চাপা কান্না। কিন্তু তা মানুষগুলোর বোধগম্য না। একজন লোক ভয় পেয়ে উঠে কুকুরটার আচরণে। কামড়ে দিবে না তো আবার! হাতের কুড়ালটা ছুড়ে মারে কুকুরটার দিকে।
কুকুরটারও ভাগ্য ভালো, একটা পায়ে সামান্য জখম হয়েছে শুধু। দৌড়ে পালিয়ে যায় গাছতলা থেকে।

রাস্তার পাশে বড় বাড়িটার প্রাংগনে রাত কাটায় কুকুরটা। ওই বাড়িতে একটা ছেলে আছে, যে মাঝে সাঝে কুকুরটাকে তার ফেলনা খাবারটুকু দিত। আজ সন্ধ্যায় সেই বাড়ির সামনেই বসে আছে কুকুরটা। সেই ছেলেটা আজও এলো অনেক রাতে। কুকুরটার জখম সে দেখতে পেয়েছে। কিন্তু তাতে কি, এইরকম কতো জখম হয় রাস্তার কুকুর গুলোর। এমনেই সেরে যায় সেগুলো। হাতের পানির বোতলটা দিয়ে একটু পানি খাওয়ায় কুকুরটাকে।

গ্রিষ্মের উত্তপ্ত দুপুরে নদীর ধারে পানি খাচ্ছে একটা খোড়া কুকুর। দুটো ছেলেও এসেছিলো নদীতে গোসল করতে। খোড়া কুকুরটাকে পানি খেতে দেখে তাদের মনে করুনা হয়নি। নদীর তীরের পাথর ছুড়তে শুরু করে ছেলেগুলো। সরু রাস্তায় খোড়া পা নিয়ে ছুটতে গিয়ে কুকুরটা পড়ে যায় নদীতে। স্রোতের নদী কুকুরটাকে আপন করে নেয়।

কয়েক বছর পরের কথা।

এক চশমা পড়া ছেলে নদীর তীরে হাটছিল। কি যেনো  ভাবছিল সে। হঠাৎ তার চোখ আটকায় একটা ছোট মাথার খুলিতে। কুকুরের হতে পারে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। তারপর সে আবার হাটতে শুরু করে। খুলিটা মিশে যায় ধুলায়। দূরে কোথায় যেন কাঠ চিরা হচ্ছে, যার শব্দ ভেসে যাচ্ছে নদীর এপার হতে ওপার।

Comments

Popular posts from this blog

চোর - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

পঙ্গু

একটি প্রেশার কুকার রম্য – সাকিব জিযান